সম্পাদকীয়
ব্যাংকগুলো হতে পারে বিকল্প
দাদনের খপ্পরে জেলে সম্প্রদায়

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশের প্রতিটি জনপদের খবর কি রাখি আমরা? শহুরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত তাদের নিশ্চিত জীবন নিয়ে এতটাই সন্তুষ্ট যে, প্রত্যন্ত অথবা দুর্গম এলাকার অধিবাসীরা কেমন জীবনযাপন করছেন, সেই খবর রাখার সুযোগ হয় না তাদের। দ্বীপজেলা ভোলার মনপুরা উপজেলাসহ ২১টি দ্বীপচরে বসবাসরত ২ লাখ জেলের জীবন কেমন, তা জানতে পারলে সেই জীবন বাদবাকি বাংলাদেশিদের হৃদয় স্পর্শ করবে নিঃসন্দেহে। তারা সরাসরি মাছ ধরা পেশায় জড়িত। মৎস্যকুলই তাদের জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু তারা জিম্মি হয়ে পড়েছেন দাদন ব্যবসায়ীদের বিশাল সিন্ডিকেটের কাছে। তাদের কাছ থেকেই দাদনের টাকা নিয়ে তারা কেনেন জাল, তৈরি করেন নৌকা। আবার দাদন ব্যবসায়ীদের আড়তে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য তারা; কিন্তু শোধ হয় না ঋণের টাকা। দাদনের টাকা দিতে গিয়ে যা থাকে, তাতে কোনোরকমে শরীর ও আত্মাকে এক রাখা যায় মাত্র। সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি, ভাগ্য বদল করতে সুদমুক্ত ঋণ চাইতে গেলে নেমে আসে নির্যাতন, কখনোবা ঘটে মৃত্যু। এমন এক মর্মান্তিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিল হাজার হাজার মানুষ। তাদেরই চোখের সামনে ২০০৩ সালে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছিল ৪ পরিবারের ৪ সদস্যকে। ২২ বছরেও বিচার হয়নি ওই হত্যাকাণ্ডগুলোর।
দাদন ব্যবসায়ীদের নির্মম শোষণ থেকে মনপুরা উপজেলার জেলেদের কীভাবে মুক্ত করা যাবে? দাদন একটি অতি পুরোনো ব্যবসা। এ ব্যবসায় ব্যক্তি হয়ে পড়েন ব্যাংক এবং তিনি ধার্য করেন উচ্চ সুদ। অসহায়, নিরুপায়, হতদরিদ্র মানুষ বাধ্য হয়ে গ্রহণ করেন উচ্চ সুদের বিনিময়ে টাকা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়, ঋণের জালে আটকা পড়েন তারা। দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারা ধার্যকৃত সুদের পরিমাণ অনেক বেশি। জেলেদের আর্থিক সহায়তায় ব্যাংকগুলো যদি এগিয়ে আসে, তাহলে অনেক কম সুদে তারা ঋণ নিতে পারবেন। আমাদের প্রস্তাব থাকবে, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জেলে সম্প্রদায় পর্যন্ত যেন বিস্তৃত করা হয়। বিষয়টি সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলে আমরা আশা রাখি। ব্যক্তির নির্মমতা থেকে বাঁচতে হলে প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা কাম্য।




