সম্পাদকীয়
মানসিক রোগী
মানসিক রোগীদের দুর্দশা, অবহেলা কাম্য নয়

সংগৃহীত
মানসিক রোগীদের জন্য দেশের একমাত্র বিশেষায়িত চিকিৎসালয় পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের দিন কাটছে নানা দুঃখ-দুর্দশা ও অবহেলার মাঝে। এ দেশে মানসিক রোগীদের ‘পাগল’ বলে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও উপহাস করা হয়ে থাকে। মানসিক হাসপাতালকে বলা হয়ে থাকে ‘পাগলাগারদ’। গারদ অর্থ কারাগার। অথচ এটি একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, কারাগার নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, হাসপাতালটিতে এক ধরনের বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন মানসিক রোগীরা। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাসপাতালটি এখন নানা সংকটে জর্জরিত। রোগীদের আধুনিক ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম নষ্ট। হাসপাতাল ভবনও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া রয়েছে জনবল সংকট এবং যানবাহনের সমস্যা। সরকারের উচিত মানসিক রোগীদের চিকিৎসার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে এসব সমস্যার দিকে দৃষ্টি দেওয়া; হাসপাতালটির সেবার মান সার্বিকভাবে উন্নত করা।
তবে মানসিক রোগীরা যে কেবল এদিক দিয়েই অবহেলিত তা নন; সাধারণভাবে তারা অবহেলিত নিজ পরিবার তথা স্বজনদের কাছেও। অনেক স্বজন তো মানসিক রোগীর পরিচয়ই গোপন রাখেন। যেসব মানসিক রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান, তাদের যথাযথ যত্ন নেন না। অথচ মানসিক রোগী সুস্থ হলেও তার পরিচর্যা জরুরি, যেন তিনি দ্রুত পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারেন। কোনো মানসিক রোগীকে হয়তো কিছু সময় পর পুনরায় হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হয়; কিন্তু স্বজনরা এক্ষেত্রে অবহেলা করেন, সময়মতো হাসপাতালে নেন না। থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও অনেক মানসিক রোগী অবহেলিত ও বঞ্চিত হন। সমাজও মানসিক রোগীদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে থাকে। অনেকে তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন না। এসব কারণে সুস্থ হওয়ার পরও অনেক রোগী হতাশাগ্রস্ত হয়ে নতুন করে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ফলে আর পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেন না তারা। এটি দুঃখজনক।
মানসিক রোগীদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এসব রোগীকে উপহাস না করে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা উচিত। মনে রাখা দরকার, কোনো না কোনো কারণে যে কোনো ব্যক্তিই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে পারেন। তেমন পরিস্থিতিতে ওই ব্যক্তির চিকিৎসা এবং চিকিৎসা-পরবর্তী সেবা যেন সঠিকভাবে হয়, সে ব্যবস্থা থাকা উচিত রাষ্ট্রে, সমাজে ও প্রতিটি পরিবারে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের অবহেলা কাম্য নয়।




