logo

সম্পাদকীয়

নেপালে গণ-অভ্যুত্থান

নেপালে গণ-অভ্যুত্থান : দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রকাশ

ডেস্ক সংগৃহীত

শেয়ারঃ

main

সংগৃহীত

প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে অবশেষে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। পদত্যাগের পর সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার তাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় বলে জানা গেছে। এই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় তরুণরা। আপাতদৃষ্টিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে এ বিক্ষোভ শুরু হলেও এর পেছনে ছিল নেপালি জনগণের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। এ ক্ষোভের কারণ দুর্নীতি, বেকারত্ব ও তরুণদের হতাশা। তরুণদের মধ্যে এ হতাশাজনিত ক্ষোভ এতটাই তীব্র হয়ে উঠেছে যে, কেপি শর্মার পদত্যাগের পরও শান্ত হয়নি নেপাল। আগুন দেওয়া হয়েছে পার্লামেন্ট ভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন এবং অনেক সরকারি স্থাপনায়।

নেপালের এ গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের গণ-অভ্যুত্থানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। শ্রীলংকায় গণবিক্ষোভের মূল কারণ ছিল ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়, যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে অচল করে দিয়েছিল। আর বাংলাদেশে চাকরিতে কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলেও গণ-অভ্যুত্থানের অন্তর্নিহিত কারণ ছিল দেশে গণতন্ত্রহীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব। এর সঙ্গে দুর্নীতি, বেকারত্ব ও তরুণদের হতাশা জন-অসন্তোষকে তীব্র করে তুলেছিল। বস্তুত শাসকগোষ্ঠীর কাছে যখন জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়, তখনই দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ থেকে গণবিস্ফোরণ ঘটে। নেপালেও তা-ই ঘটেছে। সম্প্রতি আদালতের একটি আদেশের পর নেপালের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোকে নিবন্ধনের জন্য সাত দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিল। ওই সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন না করায় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মেসেজিং অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে সরকার। এতে সংকটে পড়ে তরুণসমাজ। চাকরিসহ নানা অর্থনৈতিক সংকটে ভোগা দেশটির অনেক বাসিন্দা আয়ের মাধ্যম হিসাবে এসব প্ল্যাটফর্ম বেছে নিয়েছিল। নেপালে প্রতিবছর বহু বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। পর্যটনসংক্রান্ত অনেক পরিষেবাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। দেশটির অনেক ট্যুর অপারেটর গ্রুপ গড়ে উঠেছে ফেসবুককে ঘিরে। ফেসবুক ছাড়াও ইনস্টাগ্রামের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোয় অনেক নেপালি ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা করেন। স্বভাবতই এসব প্ল্যাটফর্মের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞা ছাত্র-জনতার ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বস্তুত বিশ্বজুড়েই তরুণদের ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠেছে তাদের সমস্যা বা স্বার্থের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের উদাসীনতা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা। এমন পরিস্থিতি এড়াতে হলে তরুণ সমাজসহ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারকে। সেই সঙ্গে আরও একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন। একটি দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে বা আশপাশে থাকা ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যখন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে যায়, তখন তাদের জীবনযাত্রার প্রাচুর্য দেখে জনগণ সরকারের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক নিয়মে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলে তারা আন্দোলন-বিক্ষোভের মাধ্যমে সরকার উৎখাতের পন্থাই বেছে নেয়।


সম্পর্কিত খবর