logo

জাতীয়

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সাথে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের সংহতি প্রকাশ

নিউজ ডেস্ক

শেয়ারঃ

main

জুলাই মিনারের পাদদেশে সমাপনী বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃবৃন্দ

গাজা অভিমুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সাথে সংহতি প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার (২রা অক্টোবর ২০২৫) বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং ছাত্র সংগঠনগুলো নানান কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন।


বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) বিকাল ৪.৩০ এ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে 'সুমুদ: স্টেডফাস্ট টুগেদার' (Sumud : Steadfast Together) নামে কর্মসূচির ডাক দিয়ে সবাইকে অংশ গ্রহণ করার আহ্বান জানায়। এর আগে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইজরায়েলের আক্রমণের প্রতিবাদে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়। এছাড়াও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ করেন।


‎গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা হলো একটা নৌবহর, যারা কিনা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি অবৈধ দখলদারির প্রতিবাদে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী বিভিন্ন রাষ্ট্রের নৌ বন্দর থেকে গাজায় উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে এবং এর মাধ্যমে তারা গাজায় ইসরাইলের নৌ অবরোধ ভাঙতে চায়। গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে একটা আন্তর্জাতিক সংহতি গড়ে তোলাই এই নৌবহরের উদ্দেশ্য। ৩১ আগস্ট স্পেনের বার্সেলোনা থেকে প্রথম নৌবহর যাত্রা শূরু করে। ধীরে ধীরে তিউনিসিয়া, ইতালির সিসিলি দ্বীপ, গ্রীসের সাইরাস দ্বীপ থেকে আরও নৌযান যুক্ত হয়। গ্লোবাল ফ্লোটিলা ট্র্যাকারের তথ্য অনুযায়ী, সুমুদ ফ্লোটিলায় মোট ৪৪টি নৌযান অংশ নেয়। এই নৌবহরে গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের জন্য ত্রাণসামগ্রী, চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ওষুধ ছিল। উক্ত নৌবহরে বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম এবং বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ চিকিৎসক, মানবাধিকারকর্মী রুহী লরেন আখতারও ছিলো। নৌবহরটি গাজার কাছাকাছি পৌঁছলে ইসরাইলি বাহিনী আক্রমণ করা শুরু করে, পহেলা অক্টোবর প্রায় সবগুলো জাহাজ আটক করে।


‎ইজরাইলের এই আক্রমণের পরপরই বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্ট্রি ইন্টারন্যাশনাল গাজামূখী ত্রাণবাহী নৌযান তাতে থাকা কর্মীদের গ্রেফতারকে বেআইনি ঘোষণা করে কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন। ‎তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সাথে সংহতি প্রকাশ করে ২রা অক্টোবর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।


‎বাগছাসের কেন্দ্রীয় সংগঠক মুহাম্মদ মুহতাসিম ফুয়াদ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে লিখেন,“প্যালেস্টাইন নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে এক্টিভিজম করে আসছি। বলা যায় বাংলাদেশ এই মুভমেন্টটার একটা বড়ো ধারা। আমরা এর সিলসিলা জারি রাখতে চাই। আজ যাদের সম্ভব সবাই চলে আসেন। একসাথে মার্চ করবো।”


‎ছাত্রশিবিরের মিছিলটি সাইন্সল্যাব থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়ে জুলাই মিনারের পাদদেশে শেষ হয়। শাহবাগ মোড়ে দাঁড়িয়ে তারা তাদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করেন। জাকসু জিএস মাজহারুল ইসলাম এ সময় বলেন, “ইজরায়েল কখনোই আন্তর্জাতিক নিয়ম মানে নি, তারা কখনো মানবতার ধার ধারে নি। তথাকথিত বিশ্ব মানবাধিকার সংস্থাগুলো তাদের কাছে জিম্মি। মজার বিষয় হলো একটা অত্যাচারী রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বে তারা সব সময় নিজেকে ভুক্তভোগী বলে দাবি করে।”

‎ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদ বলেন,“যুক্তরাজ্যের তৎকালীন প্রাইম মিনিস্টার যিনি কিনা ইরাকে গণহত্যার জন্য দায়ী, সেই টনি ব্লেয়ারকে গাজার প্রশাসক হিসেবে প্রস্তাব করেছেন ট্রাম্প। কি ঘৃণ্য একটি প্রস্তাব। আমরা এ প্রস্তাবের নিন্দা জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশ সরকারকেও এ প্রস্তাবের নিন্দা জানাতে হবে।” তিনি আরো বলেন,“আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানাবো এই ঢাকাকে আমাদেরকে অবশ্যই গ্লোবাল সলিডারিটির হাব বানাতে হবে। পৃথিবীর যেখানে কোন মজলুম থাকুক না কেন, যেখানেই কোন অত্যাচার হোক না কেন, এই ঢাকা যেন আমাদের সলিডারিটির হাব হয়।”

‎এছাড়াও তিনি বাংলাদেশে আসতে ইচ্ছুক এমন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ঘটনাতেও প্রতিবাদ জানান।


‎ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন,“বিশ্ব মানবিক সংগঠনগুলোর যে সকল সাহায্য ফিলিস্তিনে পৌঁছানোর কথা ছিল সেগুলো পৌঁছাতে দেওয়া হয়নি। আমরা দেখতে পেয়েছি, যে সকল মানুষদের চিকিৎসা পাওয়ার যে অধিকার ছিল এই অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে, এই সকল মানুষদের খাবার পাওয়ার যে অধিকার ছিল সেই অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে, এই সকল মানুষদের মানবাধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাপী এই ধরনের বর্বরোচিত গণহত্যা এবং এই ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করছি। ধিক্কার জানাচ্ছি। জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক সকল সংস্থা সহ, পৃথিবীর সকল দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশ্ব নেতাদেরকে আমরা ধিক্কার জানাই।”


‎ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন,“আপনাকে এই রক্তের খেলা অবশ্যই থামাতে হবে।”

‎সবশেষে তারা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার প্রতি সংহতি জানিয়ে তাদের বক্তব্য শেষ করেন।


‎বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) এর র‍্যালিটিও যথাসময়ে শুরু হয় এবং রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু হয় শাহবাগ জুলাই মিনারে এসে শেষ হয়। এই র‍্যালির সঞ্চালনায় থাকেন আশরেফা খাতুন, জাহিদ আহসান, মাহফুজুর রহমান, লিমন মাহমুদ হাসান, ফয়সাল মুরাদ, আফজাল হোসেন।


বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্য সচিব জাহিদ আহসান বলেন,“জুলাই শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার হয়ে একদিন ফিলিস্তিনেও পৌঁছাবে।” তিনি আরও যুক্ত করেন,“ফিলিস্তিন কোনো একটি ভূখণ্ডের নাম নয়। ফিলিস্তিন একটি অনুভূতির নাম। আমরা প্রত্যেকে একজন নির্যাতিত ফিলিস্তিনি। যতদিন ফিলিস্তিন আজাদ না হবে ততদিন আমরাও ফিলিস্তিনিদের মতই লড়াইয়ে শামিল থাকবো।”


ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরাও আলাদাভাবে মিছিল করে, সন্ধ্যাবেলায় তারা জ্বলন্ত মশাল হাতে কলেজের হলপাড়ায় মিছিল করেন। এসময় তারা ‘ফ্রি ফ্রি, প্যালেস্টাইন’, ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘ফ্লোটিলায় হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।


মশাল মিছিলে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ রাকিব হাসান বলেন,“অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা জোরালো ভাবে বলতে চাই, কূটনৈতিক কিংবা ভূরাজনৈতিক ভাবে, যেভাবেই হোক ইজরায়েলকে দমন করতে হবে। ইজরায়েলকে দমন করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের যে শক্তি আছে, তা দিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। আর জাতিসংঘ তৈরি হয়েছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কিন্তু সে জাতিসংঘ নীরবে আমরা মনে করি এই হামলার সাথে জড়িত। কয়েকটি দেশ ছাড়া প্রত্যেকটি দেশ চায় জেরুজালেমকে রাজধানী করে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করতে। আমরা শুরু থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। আমরা চাই, ফিলিস্তিনের মা-বোনদের দ্রুত অত্যাচার, নিপীড়ন থেকে মুক্তি পাক।”


ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহিদুল ইসলাম বলেন,“গত দুই বছর ধরে গাজাতে যে আগ্রাসন চলছে, তাতে জাতিসংঘ নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ মেরুদণ্ডহীন জাতিসংঘকে আমরা চাই না। যে জাতিসংঘ আমাদের মুসলিম ভাই বোনদের, মানবতাকর্মীদের রক্ষা করতে পারে না আমরা সেই জাতিসংঘকে চাইনা। আমরা বাংলাদেশের ঢাকা কলেজের মাটি থেকে বলে দিতে চাই, অনতিবিলম্বে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে। যদি জাতিসংঘ ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে মহাসচিব জাতিসংঘে থাকার কোনো অধিকার রাখে না।"


সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। শুক্রবার (৩রা অক্টোবর, ২০২৫) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল হবে।


বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্ব মানবতার পক্ষে অংশগ্রহণকে বিশেষজ্ঞরা একটা মাইলফলক হিসেবে দেখছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), উভয়ের ভিন্ন জায়গা ও ভিন্ন টাইমে শুরু হওয়া মিছিল ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জুলাই মিনারের পাদদেশে শেষ করে।


বিখ্যাত লেখক মো. আশরাফ আজিজ ইশরাক ফাহিম তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের এক পোস্টে লিখেছেন,“জুলাই মিনারকে মিছিলের গন্তব্য হিসেবে বাছাই করার বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নয়া দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দিচ্ছ।”


ফিলিস্তিন সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের আবেগের জায়গা জুড়ে আছে। রাজনীতিতেও এ বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এবং এটা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। যার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আত্মোপলব্ধি ঘটেছে, এবং তারা গাজায় ইসরাইলের অন্যায় আগ্রাসনের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ করেছে। যা বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক চেতনা ও স্বাধীনচেতা মানসিকতার পরিচয় বহন করে।


সম্পর্কিত খবর