পরিবেশ
সাদা পাথর
ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর কোথায় গেল?

সংগৃহীত
" এখানকার ভয়াবহ অবস্থা, আজকে হয়তো লুটপাট নেই। কিন্তু পাথর যা নিয়ে গেছে তাতে এ পর্যটন স্পট মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাথর বলতে কিছু নেই এখানে এখন আর " সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর নামক পর্যটন স্পটে দাঁড়িয়েই এ কথাগুলো বলছিলেন সেখানকার স্থানীয় একজন সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান রিপন।
মঙ্গলবার সকালে সাদা পাথরের ওই স্থানে গিয়ে তিনি সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখছিলেন।
তিনি জানান, আগের সাথে তুলনা করতে গেলে এখন ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর নেই বললেই চলে।
মাহবুবুর রহমান বলছেন, "আগের সাথে তুলনা করলে বলা যায় প্রায় ৭৫ শতাংশ পাথর এখান থেকে তুলে নিয়ে গেছে। ২৫ শতাংশ পাথর এখন এখানে আছে, যেটা বিজিবির ক্যাম্পের সাথে লাগোয়া স্থানে আছে।"
প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ধলাই নদের উৎসমুখে ভেসে আসা পাথরের বিশাল স্তুপের কারণে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে তৈরি এ স্থানটি পর্যটন স্পট হিসেবে গত কয়েক বছরে বেশ সাড়া ফেলেছিল।
স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে সাদা পাথর তুলে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে পরিবেশবিদ কাসমির রেজা অভিযোগ করেন, এক্ষেত্রে প্রশাসনের কার্যকর অভিযান দেখা যাচ্ছে না।
তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের দাবি প্রশাসনের পদক্ষেপ চলমান রয়েছে এবং প্রায় প্রতিদিনই অভিযান চলছে।
মি. মুরাদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, " আমাদের পদক্ষেপ চলমান আছে। আইনি যত প্রক্রিয়া করা যায় আমরা সবগুলাই করেছি। এখানে মোবাইল কোর্টসহ টাস্কফোর্সের অভিযান এবং বিভিন্ন সময় নিয়মিত মামলা পর্যন্ত দায়ের করা হয়েছে।"
এরপরেও কেন পাথর লুট বন্ধ করা যাচ্ছে না এমন প্রশ্নে মি. মুরাদ বলেন, "তারপরেও এরকম অবস্থা। গতকালকেও আমাদের অভিযান হয়েছে। আজকেও ইনফ্যাক্ট অভিযান হবে। তারপরেও কেন এরকম হচ্ছে সেটা জানার জন্য আগামীকাল একটা সভা ডেকেছি আমরা। সভা করে এ বিষয়টা আমরা বোঝার চেষ্টা করবো। সে অনুযায়ী আমরা বিকল্প বা অন্য করণীয় আছে কিনা তা নির্ধারণ করবো।"
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সিলেট জেলার সাধারণ সম্পাদক মি. রেজা মনে করেন প্রশাসন কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারে না।
বিবিসি বাংলার যত খবর
পরিবেশগতভাবে 'সাদা পাথর' স্থান গুরুত্বপূর্ণ কেন? ক্ষতিকর প্রভাব কি?
পরিবেশবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এই স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা স্বচ্ছ পানির এ আধার এই এলাকার বেশ কিছু স্থানের খাবার পানির চাহিদা মেটায়।
"প্রথম গুরুত্ব হচ্ছে এই পাথরগুলো যেখান থেকে ন্যাচারালি আসে, ওইখান থেকে পানি প্রবাহের ভয়ঙ্কর রকম তোড় তৈরি হয়। মানে পানি প্রবাহের তীব্রতা বেড়ে যায়। যেখানে তোড় বেশি সেখানে পাথর জমে। পাথরের কাজ হয় ওই তোড়ের পানিটাকে ভেঙে ভেঙে টুকরো টুকরো করে তার গতিকে নিয়ন্ত্রণ করা। এটা একটা প্রাকৃতিক ধাপ" বলেন মি. হাবিব।
শুধু তাই নয় পানির মধ্যে অক্সিজেন সংশ্লেষ করাও এর কাজ যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় 'সোলার অ্যাকুয়াটিক ন্যাচারাল প্রসেস অব ট্রিটমেন্ট' বলা হয় বলে জানান মি. হাবিব।
প্রকৃতির এই পুরো সিস্টেমে যদি কোন ব্যাঘাত ঘটানো হয় অর্থাৎ পাথর তুলে ফেলা হলে তখন সিস্টেম ভেঙে পড়ে বলে জানান এই পরিবেশবিদ।
"এর ফলে দু'পাশে প্লাবনের পরিমাণ বাড়ে, ভাঙনের সৃষ্টি হয় এবং পানিটাকে গোড়াতেই সাংঘাতিকভাবে পলিউটেড (দূষিত) করে ফেলে। মনে রাখা দরকার ওই অঞ্চলের অনেক জায়গায় খাবার পানির স্বল্পতা মেটায় এই পানি" বলেন মি. হাবিব।
এসব ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের কারণে প্রকৃতিগতভাবে অন্যান্য ক্ষতি তৈরির অভিঘাত সৃষ্টি হয় বলে মনে করেন মি. হাবিব।






