রাজনীতি
সংস্কার হচ্ছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদে
সংস্কার হচ্ছে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদে, বদলে যেতে পারে নামও

সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–কে নাম পরিবর্তনসহ সংগঠন পুনর্গঠনের পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। শিগগিরই এ নিয়ে কনভেনশন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের একটিতেও জিততে পারেনি এনসিপি–ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ–সমর্থিত বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল। এর বিপরীতে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট জয় পেয়েছে ২৩টি পদে। স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতেছেন চারটি পদে এবং একটি পদে বিজয়ী হয়েছে বামপন্থীদের প্রতিরোধ পর্ষদ।
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল পর্যালোচনা করতে গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নির্বাহী কাউন্সিলের বৈঠক হয়। সেখানে নেতাদের অনেকে হতাশা প্রকাশ করেন। নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, বিভাজন, প্রার্থীদের অভিজ্ঞতার অভাব ও অপ্রতুল প্রচার কৌশলের বিষয়।
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনটির সঙ্গে ছাত্রসংসদের সম্পর্ক এতদিন ‘অস্বীকার’ করা হলেও, এখন সরাসরি আনুষ্ঠানিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে পুনর্গঠনের চিন্তা করছে দলটি। এনসিপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “অনেকে মনে করছেন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ’ নামটি যথোপযুক্ত নয়। এনসিপির অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের মতো এই সংগঠনের নামেও ‘শক্তি’ শব্দটি যুক্ত করা যায় কি না—সে বিষয়েও আলোচনা হচ্ছে।”
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সঙ্গে আলোচনা করে খুব শিগগিরই একটি কনভেনশন ডাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এনসিপির পক্ষ থেকে। সেখানেই সংগঠন পুনর্গঠন, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন, সংগঠনের নাম পরিবর্তনসহ সম্ভাব্য সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে সংগঠনটিকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করা যায়, সেটা নিয়ে আলোচনা চলছে। পর্যালোচনা সভার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।”
ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে প্রার্থী ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখ আব্দুল কাদের এবং জিএস পদে প্রার্থী ছিলেন আবু বাকের মজুমদার। দুজনেই জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আলোচনায় এসেছিলেন। তবে তাঁরা এনসিপিতে যোগ না দিলেও, দলটির ছায়ায় থাকায় রাজনৈতিক বিশ্লেষণে তাঁদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
আবু বাকের মজুমদার বলেন, “আমাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ—কিছু মানুষ অন্য এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সংগঠনে এসেছেন। পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি।”
এছাড়া, কিছু সূত্র দাবি করছে, ছাত্রশিবিরের কিছু সদস্যও গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদে ঢুকে পড়েছিলেন, যা সংগঠনের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এনসিপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, “এখন আর কোনো পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নয়। সরাসরি দলের ছাত্রসংগঠন হিসেবেই সংগঠনকে গড়ে তোলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলভিত্তিক কমিটিও হবে।” তবে সিদ্ধান্ত নেবে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের নেতৃত্বই।
জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পর নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে এনসিপি কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছে। তাদের ছাত্রসংগঠন নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট না থাকলেও, ডাকসু নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর ছাত্ররাজনীতিতে শক্ত অবস্থান নিতে চাচ্ছে দলটি।







