সারাদেশ
দর্শক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ
ফুটবল খেলায় দর্শক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ, ইউএনওসহ আহত ২০

সংগৃহীত
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে দর্শক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিনসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামে রামু ও টেকনাফ উপজেলার ফাইনাল ম্যাচে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, গ্যালারি-মাঠ দখল, টিকিট কেলেঙ্কারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে গোটা আয়োজন এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল বিকাল ৩টায়। কিন্তু দুপুর গড়াতেই স্টেডিয়াম দর্শকে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। ওই স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা মাত্র ৮ হাজার। সেখানে ঢুকে পড়েন আনুমানিক ৫০ থেকে ৬০ হাজার দর্শক। গ্যালারিতে জায়গা না পেয়ে উত্তেজিত দর্শকরা গেট ভেঙে একের পর এক স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন।
দর্শকদের অভিযোগ, নির্ধারিত টিকিটের মূল্য ছিল ৫০ টাকা। তবে অনেক দর্শককে ১০০ থেকে ২০০ টাকা, এমনকি ১,৫০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়েছে একটি টিকিটের জন্য। বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করেও অনেকে মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। এতে ক্ষোভ আরও বাড়ে।
আবু বক্কর নামে এক দর্শক বলেন, ৫০ টাকার টিকিট আমি ১ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছি অথচ ঘণ্টাখানেক গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। পরে দেখি সবাই গেট ঠেলে ঢুকে গেল।
কামাল উদ্দিন নামে আরেকজন জানান, আমি বাচ্চা নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলাম; কিন্তু এত ভিড় আর ধাক্কাধাক্কিতে বাচ্চা সামলানো দায় হয়ে পড়েছিল। আয়োজকরা একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না।
অতিরিক্ত ভিড় সামাল দিতে মাঠে নামে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব। দর্শকদের বের করে দিতে গেলে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ দর্শকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গ্যালারির দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে। মুহূর্তেই পুরো মাঠ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এ সময় কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিনসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন। আতঙ্কে স্টেডিয়ামে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
এদিকে সংঘর্ষের পাশাপাশি বিক্ষুব্ধ দর্শকরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মাঠ দখল করে ভাঙচুর চালায় এবং কয়েক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি দর্শক প্রবেশ করায় খেলোয়াড়দের জন্য কোনো জায়গাই অবশিষ্ট ছিল না।
উপস্থিত অনেকে জানান, আয়োজক কমিটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল অপ্রতুল। সঠিক প্রস্তুতি না থাকায় তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন বলেন, খেলা শুরুর নির্ধারিত সময়ের চার ঘণ্টা আগেই দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করে জায়গা দখল করতে শুরু করে। স্টেডিয়ামের গেট ভেঙে হাজার হাজার দর্শক একযোগে মাঠে ঢুকে পড়েন। এতে হঠাৎ করেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ভিড়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং দর্শকদের সঙ্গে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ প্রথমে শান্তিপূর্ণভাবে কথার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। তবে দর্শকের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে স্বাভাবিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, জনসমাগম অনুমোদিত সীমার কয়েকগুণ বেশি হয়ে যাওয়ায় এবং মাঠ-গ্যালারি সম্পূর্ণ ভরে উঠায় পরিস্থিতি দ্রুত অরাজকতায় রূপ নেয়।
তিনি স্বীকার করেন, এত সংখ্যক দর্শক নিয়ন্ত্রণ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্যও ছিল একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসেন সজীব বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে জানাতে হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় খেলা স্থগিত করতে হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ১০ হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা, সেখানে চার থেকে পাঁচগুণ বেশি মানুষ গেট ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়েছেন।
তিনি বলেন, এ অবস্থায় খেলোয়াড়দের মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে গ্যালারিতে জায়গা না পেয়ে হাজার হাজার দর্শক মাঠ দখল করে নেয়। ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রাণপণ চেষ্টা করলেও এত দর্শককে সামাল দেওয়া ছিল দুঃসাধ্য।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক স্বীকার করেন, দর্শক চাহিদা অনুমানের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা চাইছিলাম একটি উৎসবমুখর পরিবেশে ফাইনাল আয়োজন করতে। কিন্তু এত মানুষের চাপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি মিলিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।






